রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মোহাম্মদপুরে সন্ত্রাসী রহিম ও তার ছেলের অত্যাচার নির্যাতনে অসহায় এলাকাবাসী উত্তরা ব্যাংকের এমডি রবিউল হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অপসারনের দাবিতে রাজপথে বিল্পবী ছাত্র জনতা ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়াল ৪৪ হাজার সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে দেখে কেঁদে ফেললেন মির্জা ফখরুল সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে ওসমানী জাতীয় স্মৃতি পরিষদ-এর বিশেষ বাণী জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্য হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা খ. ম. আমীর আলী ছাত্র বৈষম্য আন্দোলনে আহতদের জন্য আর্থিক সহায়তা নিয়ে পাশে বিএনপি নেতা মোঃ সাইফুল ইসলাম নরসিংদীর মনোহরদীতে প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানক্লাব ‘নেবুলাস’-এর যাত্রা শুরু প্রথমবারের মতো সচিবালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস গার্মেন্টস ব্যবসায়িদের নিঃস্ব করে কোটি টাকা প্রতারণা করে লাপাত্তা কৃষক লীগ নেতা হান্নান শেখ!
চীনে বুলেট ট্রেনের বিশালতা : আমাদের বাস্তবতা

চীনে বুলেট ট্রেনের বিশালতা : আমাদের বাস্তবতা

নিউজ ডেস্কঃ জাপান ইউরোপের পাশাপাশি চীন বুলেট ট্রেনের দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। চীনে এ বুলেট ট্রেনের নেটওয়ার্ক আমাদের ভাববার বিষয়। যেহেতু মাত্র ৫৬ হাজার বর্গমাইলের আমাদের এ ছোট দেশে ১৭ কোটি লোকের বাস। আমাদের সরকারগুলো সড়ক যোগাযোগের উন্নয়নে যেহারে তৎপর সে হারে ট্রেন যোগাযোগে সরকার কতটা গুরুত্ব দেয় ভাববার বিষয়। এত অতি ঘনবসতিপূর্ণ দেশে সড়ক যোগাযোগে সুফল পাওয়া সহজতর নয়। যদিওবা রাজনৈতিক নেতাদের তৎপরতা, তদ্বিরে সড়ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয় বলে মনে করি। এ দেশে আইন মেনে গাড়ি চালানো হয় না,বড় বড় হাইওয়েতে বাজার,গাড়ি পার্কিং, লোকাল গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করা, দ্রুতগামী গাড়িকে সাইড না দেয়া নিয়মে পরিণত। একবার যানজটে পড়লে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাইওয়েতে থাকতে হয়।ট্রেন বিশ্বে স্থল যোগাযোগে নিরাপদ আরামদায়ক বাহন। বুলেট ট্রেনের সাথে তুলনায় না আসলেও সাধারণ অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করলে আমরা অনেক অনেক পিছিয়ে। বিশ্বে ট্রেন নেটওয়ার্কের দিক দিয়ে ভারত প্রথম স্থানে। ট্রেন যোগাযোগ উন্নয়নে ভারত খুব তৎপর। তার উপর মুম্বাই থেকে আহমদাবাদ ৫০০ কি,মি দীর্ঘ বুলেট ট্রেন লাইনের কাজ চলতেছে। আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশের মধ্যে ভারতের পাশাপাশি ইরান ও ইন্দোনেশিয়া ট্রেনের বগি ও ইঞ্জিন রপ্তানি করে থাকে। ইরানে পাঁচ তারকামানের ট্রেন সার্ভিস রয়েছে। তার উপর রাজধানী তেহরান থেকে কুম হয়ে ইস্পাহান পর্যন্ত বুলেট ট্্েরনের কাজ চলতেছে। ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা থেকে ২য় বৃহত্তম নগরী সুরাবাইয়ার দিকে বুলেট ট্রেনের কাজ এগিয়ে চলছে। দুঃখের বিষয় রাজধানী ঢাকার সাথে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ট্রেন যোগাযোগ উন্নয়নে বৈঠক চলতেই আছে। কিন্তু বাস্তবতা অনেক পিছিয়ে।

বিশ্বের বুকে একমাত্র ব্যতিক্রম দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার পর বিশ্বের বড় বড় কয়েকটি দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একটি। তারা আভ্যন্তরীণ দূর যাতায়াতে স্থলপথের চেয়ে আকাশপথকে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে বিশ্বে ব্যস্ততম বিমান বন্দরগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে। যেমন- শিকাগো, আটলান্টা, ডালাস ইত্যাদি বিমান বন্দরগুলো।চীন জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বে প্রথম স্থানে। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের হিসাব মতে প্রায় ১৩৮ কোটি। ফলে চীন আকাশপথের পাশাপাশি স্থল যোগাযোগে অতি গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। যেমনি সড়ক তেমনি রেলপথ। চীনের বুলেট ট্রেনের বিশাল নেটওয়ার্ক। যা বিশ্বে অন্য কোন দেশের সাথে তুলনা হবার নয়। আগেই উল্লেখ করেছি স্থল যোগাযোগে ট্রেন আরামদায়ক নিরাপদ বাহন। চীনে বুলেট ট্রেনের টিকেটের দাম অত্যধিক চড়া হলেও নিকট যাত্রায় টিকেট পাওয়া সহজতর নয়।গত রমজানের ঈদের পর এডভোকেট মুহাম্মদ ইলিয়াসকে সাথে নিয়ে ২ সপ্তাহের জন্য চীন সফরের প্রোগ্রাম করি। এতে ২৩ জুন শনিবার চীনের গুয়াংজু থেকে বুলেট ট্রেনে সাংহাই এবং ঐ শহরে দু’দিন অবস্থান করে ২৫ জুন সোমবার সাংহাই থেকে চীনের রাজধানী বেইজিং গমনের জন্য অনেক আগে ভাগে দেশ থেকে টিকেট খরিদ করি। চীন থেকে আমদানিকারক প্রতিবেশী আলহাজ্ব মোজাফ্ফর আহমদ তাঁর চীনা ব্যবসায়িক পার্টনারের মাধ্যমে আমরা ২ জনের টিকেট খরিদ করায়ে রাখেন। টিকেটের দাম কিন্তু খুব চড়া। আমরা গুয়াংজু থেকে সাংহাই গমনের জন্য ফাস্ট ক্লাস এবং সাংহাই থেকে বেইজিং গমনের জন্য বিজনেস ক্লাস টিকেট খরিদ করি। আমাদের টিকেটের দাম জন প্রতি প্রায় ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু এ দু’সেক্টর বিমানে গেলে দাম পড়বে এর অর্ধেকের চেয়ে কম। বুলেট ট্রেনগুলোতে তিনমানের ক্লাস রয়েছে। যথা- সেকেন্ড ক্লাস, ফার্স্ট ক্লাস, বিজনেস ক্লাস। সেকেন্ড ক্লাসগুলো আমাদের দেশের ব্রড গেজ ট্রেনের মত একপাশে তিন সিট আরেকপাশে দুইসিট করে। এ সিট তথা চেয়ারগুলো কিছুটা ঘন করে বসানো। ৬/৮ টি কোচ নিয়ে দূর যাত্রা বুলেট ট্রেন। এখানে একটি কোচ বাদে বাকি কোচগুলো সেকেন্ড ক্লাস। ফার্স্ট ক্লাস ও বিজনেস ক্লাস মিলে একটি কোচ। তৎমধ্যে সামনে ৩০/৩৫ টি সিট তথা চেয়ার ফার্স্ট ক্লাস, পেছনের দিকে ১০/১২ টি সিট বিজনেস ক্লাস। ফার্স্ট ক্লাস ২টি ২টি করে চারটি সিট তথা বৃহৎ আকারের আরামদায়ক চেয়ার। সামনে প্রশস্ত জায়গা। বিজনেস ক্লাসের একপাশে ২টি আরেক পাশে ১টি সিট তথা চেয়ার আরও আরামদায়ক।১৯ জুন গভীর রাতে গুয়াংজু পৌঁছে পর দিন সকালে হোটেল থেকে মেট্রো ট্রেনে ট্রেন স্টেশন যাই বুকিং এর কাগজ দেখিয়ে মূল টিকেট নিয়ে নিতে। এডভোকেট মুহাম্মদ ইলিয়াসের নিকট আত্মীয় ডাক্তারী পড়ুয়া ছাত্র তাসিম আমাদের সাথে থাকায় সুবিধা হয়। এতে হাজার হাজার চায়নাবাসীর কোলাহলের মধ্যেও সহজে মূল টিকেট সংগ্রহ করি। গুয়াংজুতে চার দিন অবস্থান করে ২৩ জুন শনিবার সকাল ৮ টায় বুলেট ট্রেনে আমাদের সাংহাই যাওয়ার প্রোগ্রাম। ট্রেন লাইনের দূরত্ব ১৭৯০ কি.মি। ভোরে তাসিম টেঙী নিয়ে এসে আমাদেরকে হোটেল থেকে উঠিয়ে নেয়। তখন ভারি বর্ষণ চলছিল। বুলেট ট্রেন স্টেশনগুলো শহর থেকে অনেক দূরে। আমরা প্রায় ৪০/৪৫ মিনিট যাত্রার পর রেল স্টেশনে ডিপারসার সিগনেল দেখতে পাই। ঐ দিকে গিয়ে শেষ প্রান্তে পৌঁছে আমরা টেঙী ছেড়ে দিই। এখানে ইংরেজির ব্যবহার একদম না থাকায় তাসিম না থাকলে আমাদের কষ্ট হত। আমরা সাংহাই গমনের কাউন্টারে পৌঁছলে একাধিক বার আলাপ করে নিশ্চিত হই। আমরা বিদেশি বুঝতে পেরে ট্রেন কর্মকর্তা সাংহাই এবং সঠিক বলে ৩য় তলায় উঠে যেতে বলেন। তাসিমকে বিধায় দিয়ে আমরা স্ক্যালেটারে ৩য় তলায় উঠতে থাকি। তখন ভাবতে থাকি এখানকার রেল স্টেশনটি মনে হয় ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার কেন্দ্রীয় স্টেশনের মত তিনতলা বিশিষ্ট হবে। তিন তলায় গেইটের সামনে গিয়ে হতবাক হই। তখন প্রায় ৭টা ২০ মিনিট হবে। আমাদের আগে এ গেইট দিয়ে একটি ট্রেনের যাত্রী যাচ্ছে,আরও একটি ট্রেনের যাত্রী যাবে। অতঃপর আমরা সাংহাই গমনের ট্রেনের যাত্রীরা যাব। আমাদের টাইম ৭টা ৪৩ মিনিট থেকে ৭টা ৫৬ মিনিট। এ ১৩ মিনিটের মধ্যে আমাদেরকে তল্লাশির মাধ্যমে গেইট দিয়ে ঢুকে স্ক্যালেটার বা লিপ্ট বা সিঁড়ি বেয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরে গিয়ে ট্রেনে উঠতে হবে। অবাক লাগল সময় হওয়ার সাথে সাথে আমাদের ট্রেনের কয়েক ‘শ’ যাত্রী দ্রুততার সাথে তল্লাশি গেইট অতিক্রম করে যে যেভাবে পারে গ্রাউন্ড ফ্লোরের প্লাটফরমে গিয়ে ট্রেনে আসন গ্রহণ করতেছে। আমাদের কোচটি ছিল একদম পেছনে। আমরা ২ জন পাশাপাশি চেয়ারে বসে পড়লাম। বুলেট ট্রেনগলো যে পাঁচ তারকামানের অতি বিলাস বহুল তা আগে থেকে শুনে আসছিলাম। ট্রেনটি বাহির থেকে দেখতে যেমন সুন্দর তকতকে, চকচকে তেমনি অভ্যন্তরে আধুনিক পরিচ্ছন্ন মান সম্পন্ন। যথা সময়ে ৭টা ৫৬ মিনিটে ট্রেনের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। ঘড়ির কাঁটা ৮টা বাজার সাথে সাথে ট্রেন সামনের দিকে চলতে শুরু করে। ইলেকট্রিক ট্রেন আমাদের দেশের ডিজেল ইঞ্জিনের মত পৃথক ইঞ্জিন নেই। সামনে স্ক্রিনে ট্রেনের গতি, বাহিরের তাপমাত্রা চীনা ও ইংরেজি ভাষায় দেখা যাচ্ছিল। ট্রেনের গতি অতি দ্রুততার সাথে বাড়তেছিল। ১০০, ১৫০, ২০০, ২৫০, ৩০০ কি.মি অতিক্রম করে গেল মিনিটের মধ্যে। অতঃপর ৩০০ এ উপর থেকে ৩০৩ থেকে ৩০৮ কি.মি উঠানামা করতে থাকে। কিন্তু ট্রেনে কোন ঝাঁকুনী নেই,নীরবে চলতেছিল। বাহিরে দৃষ্টি না দিলে বুঝা যাবে না ট্রেনটি কত দ্রুত চলতেছে। বিমানের মত রেলের মহিলারা ট্রলী নিয়ে এসে চা-নাস্তা, কপি, জুস দিয়ে গেল। আমাদের ট্রেনটি ১৭৯০ কি.মি পথ অতিক্রম করবে ৬ ঘণ্টা ৫০ মিনিটে। মধ্যখানে দুইটি স্টেশনে ২ মিনিট করে থামবে। ট্রেনে বড় আয়না দিয়ে বাহিরে অনায়াসে দেখা যায়। তবে দৃষ্টি দিতে হবে দূরে, কাছে দৃষ্টি দিলে চোখের ক্ষতি হবে। এমনভাবে চলতেছিল ট্রেন থেকে চা কপি পড়বার সম্ভাবনা নেই। আমরা যথা সময়ে ২টা ৫০ মিনিটে সাংহাই রেল স্টেশনে পৌঁছে গেলাম।আমাদের সরকারের প্রতি নিবেদন থাকবে বুলেট ট্রেনের পরিকল্পনার দরকার নেই। চট্টগ্রাম- ঢাকা ২৫০ কি.মি এ সোজা সহজ পথটি ভালমানের ট্রেন যাতায়াতের ব্যবস্থা করলে জনগণ উপকৃত হবে সন্দেহ নেই। এতে বন্দরের মালামালও সহজে পরিবহন করা যাবে। সড়ক পথে যাতায়াতে ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। ২/৩ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম ঢাকা যাওয়া বা আসা যাবে। দৈনিক আজাদী থেকে নেয়া)লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক ও কলাম লেখক

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com